শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের তাণ্ডব: বিশ্ব মুসলিম জাগবে কবে?

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের তাণ্ডব: বিশ্ব মুসলিম জাগবে কবে?
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বিশ্বের ইতিহাসে একটি দীর্ঘ, অসীম এবং দুঃখজনক অধ্যায় হলো ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলা ও নিপীড়ন। প্রায় সাত দশক ধরে চলতে থাকা এই সংঘাতের শেষ দেখা যাচ্ছে না। ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়, তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়, এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, এক প্রশ্ন বারবার উঠে আসে: বিশ্ব মুসলিম জাগবে কবে?

ইসরায়েলের তাণ্ডব: একটি দীর্ঘস্থায়ী সংকট

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলা এবং যুদ্ধের ধারাবাহিকতা আজকের যুগের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এই সংঘাত শুরু হয়েছিল, কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে এটি আরও তীব্র ও সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, গাজা উপত্যকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বোমাবর্ষণ, বিমান হামলা, এবং ভূমি দখল অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে হাজার হাজার নিরপরাধ ফিলিস্তিনি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, অসংখ্য পরিবার হারিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে ক্রমাগত।

এই সংঘাতের মধ্যে, মুসলিম বিশ্বের প্রতি প্রশ্ন উঠছে—কেন তারা কার্যকরভাবে প্রতিবাদ করছে না? কেন মুসলিম দেশগুলো একত্রিত হয়ে এই অবিচারের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছে না? আর কবে এই মুসলিম বিশ্ব তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করবে?

বিশ্ব মুসলিমদের অবস্থান: প্রতিবাদ বা কার্যকর পদক্ষেপ?

বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা দেখা যায়, বিশেষ করে যখনই ইসরায়েলি হামলা হয়। বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে সাধারণ জনগণ সড়কে নেমে আসে, প্রতিবাদ মিছিল করে, এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে। কিন্তু এই প্রতিবাদ শুধুমাত্র এক বা দুই দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো কূটনৈতিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হচ্ছেনা, যা ফিলিস্তিনিদের জন্য সমাধান দিতে পারে।

এটা সত্য যে, কিছু মুসলিম দেশ বিশেষ করে তুরস্ক, ইরান, এবং কাতার ফিলিস্তিনের পক্ষে বরাবরই বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়েছে, কিন্তু অনেক দেশ ইসরায়েলি হামলা বা তার অপশাসনের বিরুদ্ধে নীরব থাকে বা রাজনৈতিক কারণে কিছুটা সতর্ক থাকে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ মুসলিম বিশ্বের এই বিভাজন ফিলিস্তিনের পক্ষে ঐক্য গঠনে বড় একটি প্রতিবন্ধক।

আন্তর্জাতিক কূটনীতি: প্রয়োজন কার্যকর ব্যবস্থা

বিশ্ব মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তারা কেবল নিন্দা এবং প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ না থেকে কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ফিলিস্তিনের সমস্যাকে শুধু "মুসলিম বিশ্বের সমস্যা" হিসেবে না দেখে, এটিকে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সমস্যা হিসেবে তুলে ধরা দরকার। এক্ষেত্রে, মুসলিম দেশগুলোকে জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে শক্তিশালী কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

অতীতে দেখা গেছে যে, বিশ্ব মুসলিম দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করতে পারেনি। যেমন, কিছু দেশ ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে (যেমন, সংযুক্ত আরব আমিরাত), যা মুসলিম বিশ্বের একাংশকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। এই ধরনের বিভাজন ফিলিস্তিনের জন্য কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমাধান আনতে সহায়ক হয়নি। তাই, মুসলিম বিশ্বকে একটি যৌথ উদ্যোগ নিয়ে বিশ্ব দরবারে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। শুধু নিন্দা এবং শোক জানানো নয়, বরং কার্যকর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হবে।

মানবিক সহায়তা ও সহানুভূতি: মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা

তাছাড়া, মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তার জন্যও আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। হাজার হাজার আহত মানুষ, বিপন্ন পরিবার এবং খাদ্য বা আশ্রয়ের অভাবে ভোগা মানুষদের জন্য তহবিল সংগ্রহ, চিকিৎসা সহায়তা, খাদ্য সরবরাহ এবং মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। এই মানবিক সহায়তা শুধু ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-কষ্ট কমাবে না, বরং মুসলিম বিশ্বে একতার চিত্র তুলে ধরবে।

মুসলিম বিশ্বের ঐক্য: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

মুসলিম বিশ্বের ঐক্য গঠনের জন্য কিছু প্রধান বাধা রয়েছে। প্রথমত, অনেক মুসলিম দেশ রাজনৈতিকভাবে একে অপরের সাথে বিরোধে রয়েছেন। কিছু দেশ ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, আবার কিছু দেশ তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক কারণে অনেক মুসলিম দেশ ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নির্ভরশীল, যা তাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে।

তবে, যদি মুসলিম বিশ্ব একত্রিত হয়, তাদের যৌথ শক্তি এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক হতে পারে। একটি ঐক্যবদ্ধ মুসলিম বিশ্ব ইসরায়েল এবং পশ্চিমাদের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরো ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করবে।

শেষ কথা: জাগরণের প্রয়োজন

আজকের দিনেও ফিলিস্তিনের মানুষ হত্যাযজ্ঞ, দুর্দশা এবং শোষণের শিকার হচ্ছে। দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকা এই সংকটের সমাধান শুধু নিন্দা বা প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে এখন এক হয়ে, ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিনিদের জন্য কাজ করতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ঐক্য এবং দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন।

এই সময়, মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম দেশগুলো যদি তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে পারে, তবে ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য নতুন এক যুগের সূচনা হতে পারে।


নতুন/কাগজ/জিয়া/ঢাকা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন