ফজিলাতুন্নেছার ক্ষমতার অপব্যবহার


ডিপিডিসি (ডিসট্রিবিউশন কোম্পানি) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। প্রতিষ্ঠানটির সুষ্ঠু পরিচালনা এবং দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিদ্যুৎ খাতের সুষ্ঠু কার্যক্রম ও উন্নতির জন্য ডিপিডিসি প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প পরিচালক ফজিলাতুন্নেছার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। ডিপিডিপিসির প্রকল্প পরিচালক ফজিলাতুন্নেছা তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির কারণে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। ডিপিডিপিসিতে একতরফা আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা, নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং সুশাসনকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ।
ফজিলাতুন্নেছা, ডিপিডিসির প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তার অবস্থান প্রতিষ্ঠানে শক্তিশালী করে তোলেন। দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ লবিং ও রাজনীতি, বিভিন্ন সিন্ডিকেট গঠন করে তিনি নিজের জায়গা অটুট রাখেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা ও প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তার ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা মাথায় রেখে প্রভাব ফেলেন।
ফজিলাতুন্নেছা তার ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের নানা ক্ষেত্রে তার প্রভাব বিস্তার করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি তার সহকর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি প্রভাব বিস্তার করেছেন। ডিপিডিপিসির বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ, চুক্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তার অবৈধ প্রভাব ছিল। তাঁর দাপটের কারণে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে নীতি ও প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসৃত হয়নি, ফলে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে।
একটি সুনির্দিষ্ট উদাহরণ পাওয়া গেছে যেখানে ফজিলাতুন্নেছা একটি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ তার প্রভাবশালী সংস্থার কাছে স্থানান্তর করেছেন, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
ফজিলাতুন্নেছা বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি প্রভাব বিস্তার করে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এ সিন্ডিকেটগুলির মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে বেআইনি সুবিধা নিয়ে থাকেন। তাছাড়া, তার ক্ষমতার জন্য একাধিক মানুষকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বা অন্যায্যভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, ফজিলাতুন্নেছার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ঠিকাদারি কাজে মনোযোগী হয়ে চুক্তি প্রদানকারী কোম্পানিগুলির কাছ থেকে কমিশন গ্রহণ করেছেন। এমনকি, কিছু সংবাদ মাধ্যমও দাবি করেছে যে, ফজিলাতুন্নেছা তার ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য সংস্থার কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে নিজের লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেছেন।
ফজিলাতুন্নেছার ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে ডিপিডিপিসির কর্মীরা এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে কাজ করছেন। তাদের অভিযোগ, কেউ যদি ফজিলাতুন্নেছার বিরুদ্ধে কথা বলেন বা কোনো অনিয়মের প্রতিবাদ করেন, তাহলে তাদের চাকরি চলে যেতে পারে বা তাদের ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। একাধিক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যে কেউ যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বা সমালোচনা করেন, তাকে সহ্য করা হয় না এবং তারা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে চলে যেতে বাধ্য হন।
এটি প্রতিষ্ঠানের জন্য এক বিরাট সমস্যা, যেখানে কর্মীদের স্বাধীন মতামত বা সমালোচনা প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। এমন পরিবেশ একটি প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও উন্নতি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দিতে সাহায্য করে না। ফলস্বরূপ, ডিপিডিপিসিতে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা দুর্নীতি এবং অস্বচ্ছতা আরও বাড়তে থাকে।
ফজিলাতুন্নেছার কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়, বরং প্রতিষ্ঠানটির সুশাসন এবং নীতিমালার সঙ্গেও বিরোধপূর্ণ। তিনি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ওপর এক ধরনের চাপে কাজ করান এবং তাদের স্বাধীনতা সংকুচিত করেন। তার এই আচরণ প্রতিষ্ঠানটির সুষ্ঠু পরিচালনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন ধরনের নেতৃত্বের কারণে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা ও প্রকল্পগুলির সঠিক বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
ফজিলাতুন্নেছার দ্বারা ডিপিডিপিসির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। প্রথমত, তার নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে এবং কর্মীদের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পগুলির সঠিকভাবে তদারকি করতে পারেননি, যার ফলে অনেক প্রকল্প সময়মতো বা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। তৃতীয়ত, তার দুর্নীতি ও অবৈধ প্রভাবের কারণে ডিপিডিপসি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলেছে।
ফজিলাতুন্নেছার মতো একজন কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিষ্ঠানটি গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির কারণে ডিপিডিপসি বর্তমানে একটি গভীর সংকটে রয়েছে। সুশাসন এবং নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হলে, এই ধরনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায়, প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত আরও অন্ধকারে চলে যেতে পারে। কর্তৃপক্ষের উচিত এমন পদক্ষেপ নেওয়া যা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
