আলোচনায় আশাহত বিএনপি, সামনে কি আন্দোলন?


গত কয়েকদিনে রাজনীতির মাঠে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি ছিল বিএনপি ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যকার বৈঠক। প্রত্যাশা ছিল, এই বৈঠক থেকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি স্পষ্ট রোডম্যাপের ইতিবাচক সুরাহা আসবে। কিন্তু বৈঠকের পর বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে যে হতাশা ফুটে উঠেছে, তা এক ধরনের রাজনৈতিক হতাশা তো বটেই, একইসঙ্গে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নিয়ে নানা প্রশ্নও তৈরি করেছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এ বৈঠকে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপনের আহ্বান এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ উন্মোচনের বিষয়ে আলোচনায় বসেছিল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি বা আশাব্যঞ্জক বার্তা আসেনি। বরং সরকারপক্ষের পূর্বপরিচিত কৌশল—আলোচনা হলেও মূল দাবি উপেক্ষিত—এটাই যেন আবারও সামনে এসেছে।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। একাধিক আন্দোলন, কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক মহলে চিঠিপত্র—সবই সেই একই দাবিকে ঘিরে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে একধরনের অনমনীয়তা স্পষ্ট। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—এখন বিএনপির করণীয় কী? তারা কি আবার রাজপথে আন্দোলনের দিকে যাবে?
এই মুহূর্তে বিএনপির সামনে দুটি পথ খোলা আছে: একটি হচ্ছে আলোচনার টেবিলে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়ানো এবং ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করা; আরেকটি হচ্ছে রাজপথে ফের শক্তিশালী আন্দোলনের ডাক দেওয়া।
তবে আন্দোলনের ইতিহাস বলছে, বর্তমান সরকারের সঙ্গে রূঢ় মুখোমুখি অবস্থান রাজনীতিকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে পারে—যা অতীতে বারবার ঘটেছে। অন্যদিকে, জনসমর্থন ছাড়া কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না।
এ পর্যায়ে বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, তারা কীভাবে তাদের দাবি জনগণের কাছে আরও কার্যকরভাবে উপস্থাপন করবে এবং আন্দোলনকে কতটা শান্তিপূর্ণ, সংগঠিত ও টেকসই রাখতে পারবে।
শেষ পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলনে যাবে কি না, সেটা হয়তো সময়ই বলবে। তবে এই মুহূর্তে তাদের নেতৃত্বের সামনে যে কৌশলগত সিদ্ধান্তের গুরুত্বপূর্ণ সময় এসেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
