বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার কবিরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার কবিরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ঢাকা রক্ষণাবেক্ষণ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার কবির বর্তমানে একটি মারাত্মক বিতর্কের মুখে। তাঁর বিরুদ্ধে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে ধারাবাহিকভাবে ওটিএম (Open Tender Method) পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বানের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়, এই অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেন হয়েছে।

সূত্র জানায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ প্রজ্ঞাপনে এলটিএম (Limited Tender Method) পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশ থাকলেও কায়সার কবির ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করেন। এসব টেন্ডারের মধ্যে অন্তত ৬০টির মতো দরপত্রের আইডি শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: আইডি নং.১০৬০৬৮৯, ১০৭০৫৪৬, ১০৬৬৫৯৪, ১০৬৭৭২৪, ১০৬৭৭২১, ১০৭০৫৪৩, ১০৫৮০৭৮, ১০৪৫৫৪৩, ১০৪৫৫৫০, ১০৪৫৫২৫, ১০৪৫৫৩১, ১০৪৫৫৪৬, ১০৪৩৪৩৫, ১০৪৩৪৩৮, ১০৪৩৪৪৩ প্রভৃতি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইসব দরপত্র সরকারি বিধিমালা এড়িয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করিয়ে কমিশনভিত্তিক বাণিজ্য হয়েছে, যা গণপূর্ত নীতিমালা এবং সরকারি ক্রয় আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

কায়সার কবিরের অতীত কর্মকাণ্ডও একাধিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সাভার সার্কেলে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল কাদের চৌধুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যিনি পরবর্তীতে জিকে শামীম কাণ্ডে জড়িয়ে পদাবনতি পান। অভিযোগ আছে, ওই সময় থেকেই কায়সার কবির সরকারি টেন্ডার ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেট গড়ে তোলার কৌশল শিখেন।

এরপর জামালপুরে বদলি হয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা মির্জা আজম এমপি ও তার ভাইয়ের ছত্রছায়ায় টেন্ডার সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সকল নির্বাহী প্রকৌশলীর ই-জিপি (e-GP) সিস্টেমের পাসওয়ার্ড নিজ দখলে রেখে এককভাবে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করতেন।

ঢাকায় ফিরে কায়সার কবির আজিমপুর, গুলশানসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাব-ডিভিশনে দায়িত্ব নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল আলমের আত্মীয় হওয়ায় একাধিকবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে রেহাই পেয়েছেন।

তাঁর পোস্টিং নিয়ে অভিযোগ আছে যে, পাবনা জেলার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে আজিমপুরে নিজ পছন্দমতো পোস্টিং নিশ্চিত করেছেন। একই পদ্ধতিতে তাঁর মিত্র ইলিয়াস আহমেদ এবং মাহাবুব নামের আরও দুই প্রকৌশলী ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বহাল হন।

কায়সার কবিরের পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সাবেক মন্ত্রী র. ম. আ. ওবায়দুল মুক্তাদির ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুসার মাধ্যমে গণপূর্ত অধিদপ্তরের বদলি ও পদায়ন বাণিজ্যে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুসার (মোবাইল: ০১৯৭৭৩০৬৭৪০) মাধ্যমে আন্তঃজেলা ভ্রমণ, নগদ লেনদেন ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অর্থায়নের তথ্যও উঠে এসেছে।

দুদক ও এনএসআই-এর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে নিজেকে প্রশাসনিক তদন্ত ও জবাবদিহি থেকে আড়ালে রাখার চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার কবির বলেন, “প্রকাশিত তথ্যসমূহ মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দরপত্রের আইডি যাচাই না করে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”

সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হলে এমন অভিযোগগুলো নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা জরুরি। নিয়ম ভেঙে ওটিএম পদ্ধতির অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পদায়ন, এবং দরপত্র সিন্ডিকেট একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মৌলিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেয়।

সুশাসনের দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এখন কেবল বিষয়টি নজরে আনা নয়, বরং কার্যকর তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন