বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল রাজপথ :

ব্লকেডে অচল ঢাকা, অনিশ্চিত সিদ্ধান্ত

ব্লকেডে অচল ঢাকা, অনিশ্চিত সিদ্ধান্ত
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন রাজধানী ঢাকায় বিস্তৃত আকার ধারণ করেছে। এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় গত জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায়, যার দায় সরাসরি আওয়ামী লীগের ওপর। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে রাজপথে নেমেছেন এবং তাদের দাবি এখন শুধুমাত্র ক্ষোভ নয়, বরং প্রতিশোধের রূপ নিচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তাঁর নেতৃত্বে ৮ মে রাতে রাজধানীর যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়, যা এখন পুরো রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা আজ ঢাকায় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছে, যার ফলে রাজধানীমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে এবং তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

এই আন্দোলনের সূত্রপাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে হলেও তা এখন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রবেশ করছে। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বারবার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে”, “ফ্যাসিবাদের দোসর হুঁশিয়ার”—এমন স্লোগানে মুখরিত রাজপথ এখন শুধু রাজনৈতিক প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দুই নয়, বরং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বাস্তবতার সম্ভাব্য নির্দেশনাও দিচ্ছে।

একইসাথে, “গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলন” নামে গঠিত একটি সংগঠন ২১ এপ্রিল আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এই স্মারকলিপিতে দল নিষিদ্ধ করার জন্য নির্বাহী আদেশ, দলের নিবন্ধন বাতিল, গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং বিগত ১৫ বছরের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। যদিও তিনি অন্যায়ের বিচারের পক্ষে মত দিয়েছেন, তবে এখনো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

বর্তমান আন্দোলন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংগঠনিকভাবে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—ছাত্রসমাজ এখন আর নিরব দর্শক নয়। তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার কাঠামোতে পরিবর্তন চায়, এবং সেটা দৃঢ় অবস্থানে থেকেই। সরকারের উচিত এখনই সময়োপযোগী, আইনানুগ এবং সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত নেওয়া। অন্যথায় আন্দোলন আরও ব্যাপক হতে পারে এবং তা কেবল আওয়ামী লীগ নয়, গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন