আন্দোলনের শহর ঢাকা


ঢাকা—বাংলাদেশের রাজধানী, রাজনৈতিক আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের বার্তাবাহক। ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে আমরা দেখতে পাই, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার সংগ্রাম, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন কিংবা সাম্প্রতিক সময়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নেমে আসা—সবকিছুর পেছনে ছিল এই শহরের জাগ্রত মানুষ।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, আজকের ঢাকা কি আগের মতো সেই আন্দোলনপ্রবণতা বজায় রাখতে পারছে? নাকি এ শহর এখন ক্লান্ত, বিভক্ত, কিংবা নিয়ন্ত্রিত?
বিগত এক দশকে ঢাকা শহরের রাজপথে আন্দোলনের চরিত্র ও গতিপ্রকৃতি পাল্টে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, নজরদারির প্রসার, এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ভিতরকার ভাঙন আন্দোলনকে দুর্বল করেছে। অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আন্দোলনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করলেও, বাস্তব রাস্তায় তার প্রতিফলন অনেক সময়েই সীমিত থাকে। ফলে প্রশ্ন উঠে, আজকের তরুণরা কি কেবল ভার্চুয়াল প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ?
আন্দোলনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব ও সুসংগঠিত কর্মপরিকল্পনার ওপর। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, নেতিবাচক রাজনীতির কারণে তরুণদের একটি বড় অংশ রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়েছে। নেতৃত্ব সংকট, আস্থা ও স্বচ্ছতার অভাব আগামী দিনে আন্দোলনকে আরও দুর্বল করতে পারে।
তবে সবকিছুর মাঝেও কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণে কয়েকটি আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছে, জনগণ এখনও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে জানে। পরিবেশ, সড়ক নিরাপত্তা, কিংবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত হলেও কিছু জোরালো আওয়াজ উঠেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।
আন্দোলনের শহর ঢাকা আজ এক সন্ধিক্ষণে। একটি গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব এবং ন্যায়ের পক্ষে অবিচল থাকা। আন্দোলন কেবল রাজপথে নয়, ভাবনায়, লেখনীতে, প্রযুক্তিতে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও গড়ে তুলতে হবে। প্রশ্ন একটাই—আমরা কি প্রস্তুত, নাকি ইতিহাসের এই শহর তার প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলবে?
