আন্দোলনের শহরে জনদুর্ভোগ—দায় কে নেবে?


ঢাকা যেন এখন 'আন্দোলনের রাজধানী'। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো দাবিতে রাজপথ উত্তপ্ত, সড়ক অবরুদ্ধ। শাহবাগ থেকে যমুনা, কাকরাইল থেকে মতিঝিল—যেখানে-সেখানে রাস্তায় ব্যানার, মাইকে স্লোগান, আর হাজারো মানুষের মিছিল। অথচ এর সবটাই ঘটছে এমন একটি শহরে, যেখানে দুই কোটিরও বেশি মানুষের প্রতিদিনের জীবিকা, যাতায়াত আর বেঁচে থাকার সংগ্রাম চলে সেকেন্ডে সেকেন্ডে।
নিরাপদ যাতায়াত ও নাগরিক স্বাধীনতা—দুটি একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু ঢাকায় বর্তমানে এই দুটি যেন পরস্পরের পরিপন্থী। একদিকে জনতার ন্যায্য দাবি, অন্যদিকে নগরবাসীর মৌলিক অধিকার। আন্দোলনকারীরা মনে করেন, চাপ সৃষ্টি না করলে দাবি আদায় সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই চাপ কি নিরীহ নাগরিকের গলায় ফাঁস হয়ে উঠবে? হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে রোগীর মৃত্যু, চাকরি হারানোর ভয়ে ভোগা চাকরিজীবী, কিংবা সারাদিন গাড়ি চালিয়ে একটাও ভাড়া না পেয়ে ক্ষুধার্ত পরিবারের দিকে তাকিয়ে থাকা চালক—এদের দায় কে নেবে?
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। ঢাকা মহানগর পুলিশ বারবার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ কিংবা বিকল্প কর্মসূচির পথ তৈরি না করে শুধু 'অনুরোধ'-এর ভরসায় থাকলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। অপরদিকে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোকেও ভাবতে হবে, জনসাধারণের ভোগান্তি বাড়িয়ে তাদের ন্যায্য দাবি কীভাবে জনসমর্থন হারাতে পারে।
গণতন্ত্রে আন্দোলনের অধিকার থাকবেই, কিন্তু সেই অধিকার প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন শালীনতা, সংবেদনশীলতা এবং বিকল্প ভাবনার। উদ্ভাবন দরকার নতুন কৌশলের—যাতে দাবি আদায়ের পথ সুগম হয়, কিন্তু জনজীবন অচল না হয়। আন্দোলনের ভাষা যেন রক্তচক্ষু না হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের কাছে।
ঢাকাবাসী ক্লান্ত, বিরক্ত এবং শঙ্কিত। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে রাস্তায় চলা অনবরত কর্মসূচির কাছে। এর থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে হবে সরকার, আন্দোলনকারী এবং নাগরিক সমাজ—সব পক্ষকেই। নতুবা 'আন্দোলনের শহর' ঢাকার নাম হবে শুধু ইতিহাসের এক পরিহাস, আর নগরবাসীর জীবন হবে এক অন্তহীন দুর্ভোগের প্রতিচ্ছবি।
-সম্পাদক-
