রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার চাই, কিন্তু হঠাৎ অসহযোগ নয়


জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠান শুধু রাজস্ব আহরণ করে না, বরং রাষ্ট্রের আর্থিক ভিত্তি সুদৃঢ় রাখার দায়িত্বও পালন করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ঘোষিত অসহযোগ কর্মসূচি, চেয়ারম্যান অপসারণ ও অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি ঘিরে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা গভীরভাবে চিন্তার বিষয়।
সংবাদ সম্মেলনে যে অভিযোগগুলো তুলে ধরা হয়েছে, তা হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কর্মকর্তাদের দাবি, এনবিআরের চেয়ারম্যান সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঠিক তথ্য না দিয়ে বিভ্রান্তিকর উপস্থাপন করেছেন, যা বর্তমানে সংকটের সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে যেসব সুপারিশ বা খসড়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম চলছিল, তা স্বচ্ছতার সঙ্গে জনসম্মুখে উপস্থাপন করা হয়নি বলেও দাবি উঠেছে।
এমন অবস্থায় চারটি মূল দাবি সামনে এসেছে—
১. জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল,
২. এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ,
৩. সংস্কার-সংক্রান্ত সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ,
৪. অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে টেকসই সংস্কার নিশ্চিত।
এসব দাবির মধ্যে কিছু দাবি যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পক্ষে, তেমনি কিছু দাবি প্রশাসনিক কাঠামোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, যেখানে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এনবিআরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তা হতে হবে সবার অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে। একইসঙ্গে, কর্মবিরতি বা অসহযোগ কর্মসূচি যেমন সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তেমনিভাবে এটি জাতীয় রাজস্ব প্রবাহে বিঘ্ন ঘটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
বিশেষ করে যখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চাপ, ডলার সংকট ও বাজেট ঘাটতির মতো চ্যালেঞ্জগুলো বাংলাদেশ মোকাবিলা করছে, তখন রাজস্ব প্রশাসনে স্থবিরতা আর রাজনৈতিক টানাপোড়েন কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আমরা মনে করি, এই সংকটের দ্রুত ও দায়িত্বশীল সমাধান প্রয়োজন। এনবিআর কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের উচিত—সংস্কার ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্রুত সংলাপে বসা। একতরফাভাবে কোনো সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া যেমন অনুচিত, তেমনি অসহযোগের নামে সার্বিক কর্মপরিবেশ অচল করে দেওয়াও গ্রহণযোগ্য নয়।
রাষ্ট্রের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে এবং অর্থনীতির স্বার্থে—আমরা চাই একটি কার্যকর, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, যা শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, গোটা দেশের ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক হবে।
