বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নৈরাজ্য:

শৃঙ্খলা ফেরাতে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

শৃঙ্খলা ফেরাতে চাই সমন্বিত উদ্যোগ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ঢাকা শহরের যানজট ও সড়ক নিরাপত্তা ইস্যু বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বেপরোয়া চলাচল নগরবাসীর উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে মিরপুর ১০ থেকে ১২ নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলোতে এসব রিকশা যে ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে, তা জনজীবনকে চরমভাবে ব্যাহত করছে।

সরেজমিন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো অলিগলি থেকে মূল সড়কে উঠে আসছে বিনা সংকেতে, সড়ক বিভাজক ডিঙিয়ে কিংবা উল্টো পথে চলাচল করছে—যা শুধু আইনভঙ্গই নয়, সরাসরি মানুষের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। রিকশাগুলোর এমন অনিয়ন্ত্রিত ও বেপরোয়া চলাচলের কারণে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা, যার বেশিরভাগই কোনোভাবেই গণমাধ্যমে আসছে না।

মিরপুর ১০, ১১ ও ১২ নম্বর মেট্রো স্টেশন এলাকাগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশার জমজমাট ভিড় যাত্রীদের যাতায়াতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। যাত্রীদের অভিযোগ—ফুটপাতে হকার আর সড়কে রিকশার জটলা এমনভাবে থাকে যে, মেট্রো থেকে নেমে সোজা হাঁটাও সম্ভব নয়। এতে শুধু যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে না, বরং ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও।

রিকশাচালকদের অনেকেই অভিযোগ করছেন, কিছু অনভিজ্ঞ ও নতুন চালক অতিরিক্ত ভাড়ার আশায় নিয়ম ভেঙে মূল সড়কে উঠে পড়েন। এদের কারণে আইন মানা চালকরাও হেনস্তার শিকার হন—রিকশা ডাম্পিং করা হয়, ব্যাটারি খুলে নেওয়া হয়। অপরদিকে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান চললেও, রিকশাচালকরা একে অপরকে সতর্ক করে পরিস্থিতি এড়িয়ে যান। ফলে অভিযানের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা স্বল্পমূল্যে কেনা যায় এবং চালাতে সহজ। এর ফলে ঢাকার মতো জনবহুল শহরে দ্রুত আয় করার হাতিয়ার হিসেবে অনেকেই এটিকে বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু দক্ষতা ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এই যানগুলো এখন শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

সমাধানে যা করা দরকার:
১. নিবন্ধন ও লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা:

প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও এর চালকের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে করে বেপরোয়া চালকদের চিহ্নিত করা সহজ হবে।

২. নির্ধারিত রুট ও সময়ের নীতিমালা:
প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা না গেলেও, নির্দিষ্ট সময় ও রুটে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেতে পারে।

৩. রিকশার জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড:
মেট্রো স্টেশন, হাসপাতাল, বাজার কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় সুনির্দিষ্ট রিকশা স্ট্যান্ড তৈরি করতে হবে।

৪. আইন প্রয়োগে কঠোরতা:
শুধুমাত্র বোঝানো বা অনুরোধ নয়, নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড, রিকশা জব্দসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. গণসচেতনতা বৃদ্ধি:
যাত্রীরাও যেন নিয়ম ভাঙার উৎসাহ না দেন সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্কুল, কলেজ, বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালাতে হবে।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা একদিকে যেমন স্বল্পআয়ের মানুষের জীবিকা, অন্যদিকে এটি এখন শহরের সড়ক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। এই যান ব্যবস্থাকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা বাস্তবসম্মত নয়, তবে এর নিয়ন্ত্রণ জরুরি। প্রশাসন, নাগরিক ও চালকদের সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া এই সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়। না হলে, একদিন ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়বে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন