বাজেট বাড়ে, মশাও বাড়ে! কেন এই ব্যর্থতা?


রাজধানী ঢাকা মশার দখলে। বছরের পর বছর ধরে মশা নিয়ন্ত্রণে কাগজে-কলমে বাজেট বাড়ছে, বরাদ্দ বাড়ছে, প্রযুক্তি আর পদক্ষেপের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। তবু বাস্তবে এর কোনো সুফল মিলছে না। রাজধানীবাসীর জন্য এটি এক প্রকার নিপীড়নেই পরিণত হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে বরাদ্দ রেখেছে প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরেও খরচ হয়েছে ১৬৮ কোটি টাকা। গত ১০ বছরে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩০ কোটিরও বেশি। কিন্তু এত অর্থ ব্যয় সত্ত্বেও মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ তো দূরে থাক, প্রতিবছর যেন তা আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
এই অর্থ কোথায় যাচ্ছে? কতটা কাজে লাগছে? নগরবাসী এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে বছরের পর বছর ধরে। দুই সিটি কর্পোরেশন ড্রোন চালিয়ে মশার জন্মস্থান চিহ্নিত করছে, ব্যাঙ ও হাঁস ছেড়ে প্রাকৃতিক উপায়ে মশা নিধনের চেষ্টা করেছে, এমনকি জনগণের ঘর থেকে পরিত্যক্ত দ্রব্য কিনে নেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু মশার যন্ত্রণায় জনজীবন আজও বিপর্যস্ত।
এই ব্যর্থতার দায় কেবল আবহাওয়া, নগরায়ণ বা জনসচেতনতার ঘাটতির ওপর চাপিয়ে দিলে চলবে না। প্রকৃত ব্যর্থতা ব্যবস্থাপনার, পরিকল্পনার এবং সর্বোপরি জবাবদিহির অভাবের। এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে দুই সিটির প্রচেষ্টা কতটা ধারাবাহিক ও কার্যকর—সেটি এখন বড় প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পানি নিষ্কাশনের দুর্বলতা, প্লাস্টিক বর্জ্যের অসচেতন ব্যবহারের ফলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। অথচ সিটি কর্পোরেশনের কৌশলগুলো বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ‘বিশেষ অভিযান’ আর জনসচেতনতামূলক ব্যানারে আটকে থাকে। নিয়মিত, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং জনসম্পৃক্ত কার্যক্রমের ঘাটতি রয়ে যায়।
আমরা মনে করি, এই ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা ও বাজেট অপচয়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে যদি নগরবাসী দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে বাধ্য হয়, তবে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক—এই বাজেট কার জন্য? কাদের সুবিধার্থে?
মশা নিধনে শুধু মেশিন আর কীটনাশক নয়, দরকার কৌশলগত পরিকল্পনা, স্বচ্ছ বাস্তবায়ন এবং নিরীক্ষিত তদারকি। একই সঙ্গে প্রয়োজন জনসম্পৃক্ত ও কার্যকর সচেতনতা উদ্যোগ, যা লোক দেখানো নয় বরং বাস্তবধর্মী হবে।
আর যদি দুই সিটি কর্পোরেশন এ ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা না নেয়, তাহলে শুধু ডেঙ্গু নয়—মশা-সংশ্লিষ্ট আরও প্রাণঘাতী রোগের মহামারির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে নগরবাসীকে।
