শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা:

তারেক রহমানের বক্তব্য ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের বক্তব্য ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা, বিতর্ক ও বিভাজন নতুন কিছু নয়। তবে এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক মন্তব্য সেই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। বুধবার (২৮ মে) নয়াপল্টনে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজিত “তারুণ্যের সমাবেশে” ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান যেভাবে নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে “টালবাহানার” অভিযোগ তুলেছেন, তা শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং একটি গভীর গণতান্ত্রিক সংকটের প্রতিচ্ছবি।

তারেক রহমান বলেন, “নির্বাচন ব্যবস্থায় আংশিক না পুরো সংস্কার এ নিয়ে এখন টানাপোড়েন চলছে।” এই কথার মধ্যেই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন নিয়ে যে ঐক্যমত্য সৃষ্টি হওয়া দরকার ছিল, তা আজও অনিশ্চয়তার বেড়াজালে আটকে আছে।

এমন এক সময়ে এই বক্তব্য এসেছে যখন দেশে একটি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মেরুকরণ দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থায় কিছু রকম পরিবর্তনের আভাস দেওয়া হলেও বিরোধী পক্ষের দাবি বরাবরই ছিল একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন। বিএনপির এই দাবিকে “অযৌক্তিক” বা “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত” বলে প্রচার করা হলেও, বাস্তবতা হচ্ছে জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচনই জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায় না। এই কথাটিই তারেক রহমান সরাসরি বলেছেন।

তারেক রহমানের বক্তব্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তরুণ প্রজন্মের প্রতি তার আহ্বান। তিনি বলেন, “জনগণই বিএনপির ক্ষমতার মূল উৎস।” বর্তমান প্রজন্মের একটি বড় অংশ রাজনীতি নিয়ে উদাসীন বা বিতৃষ্ণ হলেও তারা দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। রাজনীতিকে যদি সত্যিকার অর্থে জনকল্যাণের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করা যায়, তাহলে তরুণরাই হতে পারে পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।

এছাড়া তারেক রহমান “কথার রাজনীতি” থেকে “বাস্তবায়ন ও দৃষ্টান্ত” স্থাপনের কথাও বলেন। এ বক্তব্যে একদিকে যেমন রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে সরকারের বর্তমান অবস্থানের প্রতি তীব্র সমালোচনাও প্রতিফলিত হয়েছে। তার ভাষায়, “দেশের বহুল জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারলেই উন্নয়ন সম্ভব”। এটি একটি অর্থনৈতিক রূপরেখার দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিমুখী নীতি গুরুত্ব পেতে পারে।

অবশ্য প্রশ্ন থেকে যায় এই বক্তব্য কেবলমাত্র রাজনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল, না কি বাস্তব কোনও রূপরেখার অংশ? বিএনপি যদি সত্যিই ভবিষ্যতে সরকারে আসতে চায়, তবে তাদের এই বক্তব্যগুলোকে রাজনৈতিক নীতিতে রূপান্তর করতে হবে। শুধু সমালোচনা নয়, সমাধানের প্রস্তাবও থাকতে হবে।

শেষমেশ, নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের হৃদস্পন্দন হয়, তবে সেই হৃদপিণ্ডে আজ যেভাবে অনিশ্চয়তা জমেছে, তাতে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সকল রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তারেক রহমানের বক্তব্য সেই জাগরণের ডাক হতে পারে—যদি তা কেবল রাজনৈতিক বক্তব্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বাস্তবসম্মত ও কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের মানুষের আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটাতে পারে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন