অপরাধের লাগাম টানতেই হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক


রাজধানী ঢাকায় চার মাসে ১৩৬টি খুনের ঘটনা কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি নগরবাসীর নিরাপত্তাহীনতার বাস্তব প্রতিফলন। গুলি, ছুরি, চাপাতি কিংবা প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড—সব কিছু যেন ক্রমেই স্বাভাবিক চিত্র হয়ে উঠছে শহরজীবনে। এমনকি জনাকীর্ণ এলাকায়, দিনের আলোতেও খুন ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে, যা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতিকে তুলে ধরে।
সাম্প্রতিক সময়ে গুলশান, মগবাজার, বাড্ডা, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ পেলেও অপরাধীরা অনেক সময় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্লিপ্ততা কিংবা অক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে জনমনে। জননিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থার পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জামিনে ছাড়া পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পুনঃতৎপরতা, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সংগঠিত কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে পুঁজি করে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক দিক হলো—অপরাধীরা মনে করছে, তারা পার পেয়ে যাবে। কারণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশের নিরবতা কিংবা দুর্বলতা অপরাধীদের সাহস জুগাচ্ছে।
এ অবস্থায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জনসম্পৃক্ত, শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও জিরো টলারেন্সভিত্তিক পদক্ষেপই সময়ের দাবি। এলাকার পরিস্থিতি বুঝে বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি, প্রযুক্তির সহায়তায় নজরদারি জোরদার করতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিটি ঘটনায় সঠিক তদন্ত ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।
রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক অস্থিরতা যতই থাকুক, নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে উন্নয়ন কিংবা শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা কল্পনাই করা যায় না। আমরা আশা করি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অচিরেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এবং রাজধানীসহ দেশজুড়ে আইনের শাসন ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনবে। সন্ত্রাসের ছোবল থেকে রক্ষা পাক জনগণ, নিরাপদ হোক শহর।
