আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধানসহ তিন জেনারেল নিহত


রবিবার (১৫ জুন) রাত। তেহরানের আকাশ তখনও নিশ্চুপ, শহর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎই শোনা গেল ভয়ার্ত এক গর্জন। মুহূর্তের মধ্যেই কেঁপে উঠল রাজধানীর একটি অভিজাত আবাসিক এলাকা।
ইসরায়েলি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানা ছিল একেবারে নির্ভুল—মারাত্মক ও সুনির্দিষ্ট। সেই আঘাতে মৃত্যু হয় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান ও দুই উচ্চপদস্থ জেনারেলের। এটি কেবল একটি বিমান হামলা নয়—এ যেন ইরানের গোয়েন্দা কাঠামোকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া এক বার্তা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, এই হামলাটি ছিল পূর্বনির্ধারিত এবং একাধিক উপগ্রহ চিত্র ও ইন্টেলিজেন্সের সমন্বয়ে পরিচালিত। নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন আইআরজিসির আভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান, যিনি সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক গোপন মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
হামলার পরপরই এলাকাজুড়ে ধোঁয়া, আগুন এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় উদ্ধারকারী দল ও সেনাবাহিনী।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হত্যাকাণ্ড শুধু তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তার প্রাণহানি নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ভারসাম্যে একটি বড় ধাক্কা।
তেহরানের প্রতিক্রিয়া এখনো পুরোপুরি প্রকাশ্যে আসেনি, তবে প্রত্যাঘাত যে সময়ের অপেক্ষা মাত্র—তা নিয়ে কারো দ্বিধা নেই।
তেহরানের এক আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)-এর গোয়েন্দা শাখার প্রধানসহ তিনজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় ও আধা-সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলো হামলায় তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি, যিনি ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে আইআরজিসির গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। কাজেমি ছিলেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অপারেশনে বহু বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
নিহত অন্য দুই কর্মকর্তা হলেন হাসান মোহাক্বিক, যিনি গোয়েন্দা সংস্থার উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন, এবং মোহসেন বাঘেরি, একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা।
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা এবং আধা সরকারি তাসনিম জানিয়েছে, রবিবার রাতে তেহরানে টার্গেট করে চালানো হামলায় এই তিনজন নিহত হন। হামলার সময় তেহরানের আকাশে একাধিক ড্রোন এবং বিমান শনাক্ত করা হয়। বিস্ফোরণে কাঁপে আশপাশের কয়েকটি ভবন।
হামলার পর আইআরজিসি এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলি অভিযানের জবাবে তারা শিগগিরই প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের আকাশ ও মহাকাশ ইউনিট ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা ঘাঁটিগুলোর ওপর পাল্টা হামলা চালাবে। প্রতিশোধ অনিবার্য।”
এদিকে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই অভিযানের দায় স্বীকার করে বলেন, “আমরা আইআরজিসির শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছি। তারা আমাদের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিল। সাহসী পাইলটরা এখন তেহরানের আকাশে অবস্থান করছে এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাও আমাদের নজরে রয়েছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, মোহাম্মদ কাজেমির মতো একজন অভিজ্ঞ গোয়েন্দা কর্মকর্তার মৃত্যু ইরানের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাঠামোর জন্য বড় ধরনের ধাক্কা। জাতীয় কাউন্সিল অব রেজিস্ট্যান্স অব ইরানের তথ্যমতে, কাজেমি শুধু একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন না, বরং খামেনির ‘ছায়াসঙ্গী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার নেতৃত্বে দেশের ভেতর ও বাইরে বহু গোপন মিশন পরিচালিত হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে।
