মেক্সিকোতে অফিসে ঢুকে মেয়রকে গুলি করে হত্যা


মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলে আবারও রাজনৈতিক সহিংসতা রক্তাক্ত করলো জনজীবন। রোববার স্থানীয় সময় এক নারী মেয়রকে তার কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। এটি দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতিবিদদের লক্ষ্য করে চালানো সহিংসতার সর্বশেষ ও ভয়াবহ ঘটনা।
নিহত মেয়রের নাম এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি, তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে এবং হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত, তা অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেক্সিকোতে স্থানীয় রাজনীতিকদের ওপর সহিংস আক্রমণ বেড়ে গেছে। নির্বাচনী সময়ে ক্ষমতা দখল এবং মাদক চক্রগুলোর প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে এমন হত্যাকাণ্ড নতুন কিছু নয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের ঘটনা দেশটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ফেলছে।
সরকার পক্ষ থেকে দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেওয়া হলেও এ ধরনের অপরাধে বিচারপ্রক্রিয়া প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো মেয়র হত্যার নিন্দা জানিয়ে বলছে, রাজনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এ সহিংসতা থামবে না।
মেক্সিকোর ওয়াক্সাকা রাজ্যের সান মাতেও পিনাস শহরে আবারও ভয়াবহ সহিংসতা ঘটেছে। রোববার মোটরসাইকেলে করে আসা একদল সশস্ত্র হামলাকারী সরাসরি শহরের টাউন হলে ঢুকে মেয়র লিলিয়া গার্সিয়া এবং তার সহকর্মী এলি গার্সিয়াকে গুলি করে হত্যা করে। স্থানীয় পুলিশ এই হামলার ঘটনা নিশ্চিত করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, চারজন অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষীদের ভয় দেখিয়ে মেয়রের দপ্তরে ঢুকে পড়ে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় আরও দুই পুলিশ সদস্য আহত হন, যাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওয়াক্সাকা রাজ্যের প্রসিকিউটরের দপ্তর জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্তে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে এবং ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা ও ফেডারেল নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে স্থানীয় অপরাধী চক্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে মেক্সিকোর রাজনীতিবিদ, মেয়র ও সরকারি কর্মকর্তারা ধারাবাহিকভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, বিশেষ করে মাদক-চক্রের প্রভাববিস্তারকারী অঞ্চলে।
মাত্র এক মাস আগেই রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে আরেকটি ভয়াবহ হামলায় নিহত হন মেয়র প্রার্থী ক্লারা ব্রুগাদার দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এই ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে গোটা দেশজুড়ে, বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনের সময় রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা নিয়ে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মেক্সিকোয় রাজনৈতিক সহিংসতা ক্রমেই নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থার জন্য বড় হুমকি।
