পারমাণবিক হামলায় ইরানকে সমর্থন দেবে পাকিস্তান?


মধ্যপ্রাচ্যে আবারও বাড়ছে উত্তেজনা। কয়েকদিনের ধারাবাহিক হামলা-পাল্টা হামলায় তীব্র হয়ে উঠেছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার পুরনো বৈরিতা। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে পরিস্থিতি এমন এক মোড় নিয়েছে, যা অঞ্চলজুড়ে বড় ধরনের সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
গত শুক্রবার ভোররাতে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ কয়েকটি কৌশলগত এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ইসরায়েল তাদের একটি সীমিত আকারের বিমান হামলায় ইরানের কয়েকটি সামরিক ও গবেষণা কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। যদিও তেহরান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এসব হামলার দায় ইসরায়েলের ওপর চাপায়নি, তবে আভাস-ইঙ্গিতে তারা ইসরায়েলকেই অভিযুক্ত করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ঘিরে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের মধ্যেই এ ধরনের হামলা নতুন করে উত্তেজনা উসকে দিয়েছে। ইসরায়েল মনে করছে, ইরান তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি, এবং তেহরানের পারমাণবিক অগ্রগতি ঠেকাতে প্রয়োজনে সামরিক ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
এদিকে ইরানও পাল্টা পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, "যেকোনো আক্রমণের জবাব আমরা দ্বিগুণ শক্তি দিয়ে দেব।"
জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহল এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কূটনৈতিকভাবে উত্তেজনা কমিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়েছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে।
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারেও এই টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে। তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বড় সংঘাত শুরু হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগার আশঙ্কা করছে অর্থনীতিবিদরা।
পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ভর করছে আগামী কয়েক দিনে তেহরান ও তেল আবিবের অবস্থানের ওপর। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে উত্তেজনার গ্রাফ আবারও ঊর্ধ্বমুখী।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল মহসেন রেজায়ি দাবি করেছেন, যদি ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলা চালায়, তাহলে পাকিস্তানও পাল্টা পারমাণবিক হামলা চালাবে। তিনি আরও জানান, পাকিস্তান এ বিষয়ে ইরানকে আশ্বস্ত করেছে।
এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের মাত্র নয়টি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, এবং ইসরায়েল ও পাকিস্তান উভয়ই সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে, চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ইরান ১৩ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে ১৫০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১০০টিরও বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলও পাল্টা হামলা চালিয়ে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু করেছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন ইসরায়েলি ও ৭৫ জন ইরানি নিহত হয়েছেন।
এছাড়া, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, তাহলে তা হবে "অতুলনীয় প্রতিশোধের" মতো। তবে, তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে শিগগিরই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
এই পরিস্থিতিতে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক সহযোগিতা এবং মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
