মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: সুশাসনের করুণ পরাজয়


উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশু প্রাণ ঝরে পড়ার হৃদয়বিদারক ঘটনার পর গোটা দেশ আজ শোকে স্তব্ধ। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ শিশুসহ মোট ২৭ জন নিহত ও ৭৮ জন আহত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিক হলো, দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা বোর্ড কিংবা মন্ত্রণালয়ের কেউ জানাতে পারছে না, ঠিক কতজন শিক্ষার্থী তখন ভবনে অবস্থান করছিল। এটা কেবল অব্যবস্থাপনা নয়; এটি আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সুশাসনের চূড়ান্ত ব্যর্থতা।
একটি নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি প্রতিদিন কত শিক্ষার্থী উপস্থিত, কে কোন কক্ষে, এমন মৌলিক তথ্য না থাকে, তবে প্রশ্ন উঠে এর প্রশাসনিক সক্ষমতা নিয়ে। আরও দুঃখজনক বিষয় হলো, সংবাদমাধ্যম ও প্রশাসনের জিজ্ঞাসার পরও মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ ‘সুনির্দিষ্ট’ তথ্য দিতে পারছে না। খাতায় হাজিরা নেওয়া হলেও সেই রেকর্ড অদৃশ্য, এ কথার মানে দাঁড়ায়, সেখানে ব্যবস্থাপনার শিকড়েই গলদ।
এমন সংকটময় মুহূর্তে তথ্য গোপন বা বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দেওয়া শুধু দায়িত্বহীনতা নয়, এটি বিপন্ন পরিবারগুলোর প্রতি এক ধরনের অবিচার। অভিভাবকরা যখন সন্তানদের খোঁজে দিগ্বিদিক ছুটছেন, তখন প্রতিষ্ঠানের উচিত ছিল স্বচ্ছ ও দ্রুত তথ্য সরবরাহ। অথচ সেখানে চলছে অস্পষ্টতা, আর এই সুযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে মানুষের আতঙ্ক বাড়ানো হচ্ছে।
শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোরও দায়িত্বহীনতা স্পষ্ট। শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি দ্রুততার সঙ্গে একটি তালিকা আদায় করতে না পারে, তাহলে এমন দুর্যোগে তাদের ভূমিকার যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
এ ঘটনার পর দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি রেকর্ড ও ভবন নিরাপত্তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে অতি দ্রুত একটি স্বচ্ছ তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের শনাক্ত ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ এই ট্র্যাজেডি কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা নয়; এটি আমাদের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার নগ্ন প্রতিচ্ছবি।
আমরা নিহত শিশুদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং তাদের পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। সেই সঙ্গে দাবি জানাই, এই ঘটনা যেন আর একটি ‘সংবেদনশীল দুর্ঘটনা’ হিসেবে ধামাচাপা না পড়ে। কারণ, এ শুধু স্কুল নয়; এ আমাদের ভবিষ্যৎ।
