সেলেনার গল্প: আত্মবিশ্বাস যেখানে অস্ত্র


ডিজনি তারকা হিসেবে যাত্রা শুরু, তারপর গানের জগতে উত্থান, সম্পর্কের টানাপোড়েন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে লড়াই-সবকিছুর মধ্য দিয়ে এক অনন্য সেলেনা গোমেজকে গড়ে তুলেছেন তিনি নিজেই। কখনো ভেঙে পড়েননি, বরং প্রতিটি ভাঙন থেকে নিজেকে নতুন করে গড়েছেন। তিনি শুধুই গায়িকা বা অভিনেত্রী নন, আত্মবিশ্বাস আর সাহসিকতার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। সেলেনা মানেই নিজের গল্প নিজে লেখা এক অনুপ্রেরণার নাম। জন্মদিনে তাকে ঘিরে ফিরে দেখা যাক সেই গল্প, যে গল্প আত্মসম্মান, আত্মপ্রেম আর নিজের জায়গা করে নেওয়ার।
১৯৯২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে তার জন্ম। খুব অল্প বয়সেই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের সাক্ষী হন তিনি। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পরিবার ভেঙে যাওয়ার কষ্ট তাকে সময়ের আগেই পরিপক্ব করে তোলে। একসময় মা ম্যান্ডির কাছেই বড় হন সেলেনা। মা ছিলেন থিয়েটার অভিনেত্রী-তার হাত ধরেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্ম নেয় সেলেনার।
অভাব-অনটনের মধ্যেও মায়ের লড়াই, একমাত্র মেয়েকে কিছু একটা করে তোলার চেষ্টা, আর মেয়ের নিরন্তর পরিশ্রম মিলিয়ে একটা সুন্দর ভবিষ্যতের ভিত তৈরি হচ্ছিল।
সেলেনার ক্যারিয়ার শুরু হয় ‘বার্নি অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ নামক শিশুতোষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এরপর জনপ্রিয়তা আসে ডিজনি চ্যানেলের ‘উইজার্ডস অব ওয়েভারলি প্লেস’ সিরিজে অভিনয় করে। সিরিজটি তাকে এনে দেয় ব্যাপক পরিচিতি এবং তৈরি করে এক বিশাল ভক্তবাহিনী।
তবে সেলেনা এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি নিজের গানের ক্যারিয়ার শুরু করেন ‘সেলেনা গোমেজ অ্যান্ড দ্য সিন’ ব্যান্ডের মাধ্যমে। পরবর্তীতে একক গায়িকা হিসেবেও সেলেনা সফল হন। ‘কাম এন্ড গেট ইট’, ‘হ্যান্ডস টু মাইসেলফ’, ‘লস ইউ টু লাভ মি’ তার প্রতিটি গান যেন নিজের জীবনেরই গল্প হয়ে ওঠে।
যে কোনো তারকার জীবনের মতোই, সেলেনার জীবনেও ছিল প্রেম-বিচ্ছেদের টানাপোড়েন। পপ তারকা জাস্টিন বিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরেই ছিল আলোচনা। প্রেমের গল্প যেমন ছিল রঙিন, তেমনি বিচ্ছেদের ছায়াও ছিল গভীর।
এই সম্পর্কের অবসান তার জীবনে এক বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। আবার লোপাস নামক একটি অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হন, যা তার শরীরের পাশাপাশি মনের ওপরও প্রভাব ফেলে। এই রোগের কারণে কিডনি প্রতিস্থাপন পর্যন্ত করতে হয় তাকে।
যখন বেশিরভাগ তারকাই তাদের দুর্বলতা আড়াল করেন, তখন সেলেনা গোমেজ ঠিক উল্টো পথে হাঁটেন। তিনি খোলাখুলি বলেন তার মানসিক সমস্যার কথা, বিষণ্ণতার কথা, চিকিৎসা নেওয়ার কথা। ভক্তদের বলেন, ‘নিজেকে ভালোবাসতে শেখো, প্রয়োজন হলে সাহায্য নিতে দ্বিধা করো না।’
তার এই সরল স্বীকারোক্তি, সাহসী প্রকাশ এবং চিকিৎসার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তাকে আরও আপন করে তোলে সাধারণ মানুষের কাছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের জন্য তিনি হয়ে ওঠেন এক মানসিক সাহসের প্রতীক।
সেলেনা শুধু শিল্পী নন, একজন সমাজকর্মীও। ইউনিসেফের সবচেয়ে কমবয়সী শুভেচ্ছা দূত হিসেবে তিনি কাজ করেছেন নানা প্রজেক্টে। নারীদের অধিকার, শিক্ষার প্রসার, ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার দূরীকরণ-সবকিছুতেই তার সরব অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
তিনি ‘রেয়ার বিউটি’ নামে একটি মেকআপ ব্র্যান্ড চালু করেন, যার লাভের একটি বড় অংশ যায় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কাজের পেছনে। এমনকি ‘ওয়ান্ডারমাইন্ড’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মও চালু করেন, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করা যায় খোলামেলা ভাবে।
