মামলার আসামীকে টাকার বিনিময়ে ফায়ার সার্ভিসে পদোন্নতি


বাগেরহাট ডিএডি দায়িত্বে থাকা সাবেক কর্মকর্তা গোলাম ছারোয়ারসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র স্টেশন অফিসার/সমমান পদের কর্মকতাকে পদোন্নতি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে সুপারিশ করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এ সুপারিশের ভিত্তিত্বে মন্ত্রণালয় গত ২৫ সেপ্টেম্বর যুগ্মসচিব জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ৪২ জন স্টেশন অফিসার/সমমান পদের অফিসারকে উপসহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেন।
এই তালিকায় রয়েছে ফৌজদারী মামলার আসামী এবং বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তার নাম। এসব জেনেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পদোন্নতি দিতে সুপারিশ করেন অধিদপ্তর। ২০২২ সালের ফৌজদারী মামলার আসামী থাকা সত্বেও এই তালিকায় পদোন্নতি পেয়েছেন বাগেরহাটের দায়িত্ব পালন করা গোলাম ছারোয়ার। এ তালিকায় মামলার আসামী গোলাম ছারোয়ারের নাম ক্রমিক নং ৩ নাম্বারে। এরপর তাকে উপসহকারী পরিচালক হিসেবে পোস্টিং দেওয়া হয় ঝালকাটি। অভিযোগ উঠেছে, গোলাম ছারোয়ারের বিরুদ্ধে মামলার সকল কাগজপত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক (প্রশা: ও অর্থ) ও উপপরিচালক (প্রশা: ও অর্থ) এর কাছে একাধিকবার পাঠানো হয়। তারা মামলার তথ্য গোপন করে টাকা লেনদেন করে গোলাম ছারোয়ারকে পদোন্নতি দিতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পদোন্নতি ভাগিয়ে নিতে প্রথম উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিনের কাছে আসেন গোলাম ছারোয়ার। জসিমের দেখানো মতে এরপর গোলাম ছারোয়ার মিরপুর ডিজির ভাই নুরউদ্দিন আনিছের সাথে যোগাযোগ করেন। এসব দেন দরবার মিরপুর অবস্থিত ঢাকা সেপ্টি এন্ড সল্যুশন নামক প্রতিষ্ঠানে হয়। এখানেই সব বদলী ও পদোন্নতির দেন দরবার করেন ডিজির ভাই আনিছ।
ফৌজদারী মামলার এ আসামীকে পদোন্নতি দিয়ে বিপাকে পড়েছেন খোদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন। নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে তরিঘড়ি করে গোলাম ছারোয়ারকে সাময়িক বরখাস্ত করেন তিনি। গত ৯ নভেম্বর এক অফিস আদেশে এ বরখাস্ত করা হয়।
বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, মো: গোলাম ছারোয়ার (পিএন-২১২৬) উপসহকারী পরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঝালকাটি এর বিরুদ্ধে স্ত্রী নারগিস আক্তার বিজ্ঞ অতি: মূখ্য মহানগর হাকিম এর আদালত, খুলনায় ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় সিআর মামলা নং-১৪৭৪/২২, তারিখ: ৩১/০৮ /২০২২ দায়ের করেন। বর্ণিত মামলা প্রেক্ষিতে আপনি গত ১১/০৯/২০২৩ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে হাজির হয়ে জামিন গ্রহন করায় আপনাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের অফিস মেমোরেন্ডাম নং ED(Reg,-VI)S-123/78/115(500), তারিখ: ২১/১১/১৯৭৮ মোতাবেক চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হল। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আপনি উপপরিচালকের দপ্তর বরিশাল সংযুক্ত বলে গণ্য হবেন এবং সাময়িক বরখাস্তকালীন আপনাকে সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে। আপনি কর্মস্থলে উপস্থিত থাকলে বিধিমতে খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে এ আদেশ জারী করলেও সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে, মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন ও তার ভাই নুর উদ্দিন আনিছ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পদোন্নতি দিয়ে মামলা ধামাচাপা দিতে চেয়েছেন। টাকা লেনদেন করার কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে কালবিলম্ব করেন। এমনইভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজি মাইন উদ্দিন ও তার ভাই নুর উদ্দিন আনিছ সিন্ডিকেট লুটপাট ও অনিয়ম করে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন অধিদপ্তরের যোগ্য কর্মকর্তারা।
আগামী পর্বে ডিজির অভিযোগ তদন্ত ধামাচাপা ও পক্ষপাতমুলক তদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে বিস্তারিত।
জি/কাগজ/দেশ/ঢাকা/নিউজ
