ঢাকা উত্তরার আতঙ্ক গোপালগঞ্জের রবিউল


২০১০ সালের শুরুর দিকটায় আব্দুল্লাহপুরের আবাসিক হোটেল গুলোতে দালালী করেই ঢাকায় রবিউল ইসলামের আত্মপ্রকাশ ঘটে। চারিত্রিক অবক্ষয়ের কারণে একটি আধা-সামরিক বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত এবং মামলার ঘটনায় গ্রাম ছাড়া রবিউল আজ 'উত্তরা প্রেসক্লাব-২'র আপ্যায়ন সম্পাদক।
রবিউলের দীর্ঘদিনের পরিচিত আমজাদ জানান, রবিউল নিজেকে বিডিআর পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। উত্তরার ফ্লাট বাসা-বাড়িতে নারী দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা এবং জুয়ার বোর্ড পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রবিউল ইসলাম ওরফে বিডিআর।
ব্যবসায়ী কবির জানান, বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিটের নাম ভাঙ্গিয়ে বছরের পর বছর রবিউল উত্তরা দাপিয়েছে। জামালপুরের কবিরের নেতৃত্বে ২০২০ সাল পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য ছিল বিডিআর। তিনি নিজে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসতেন ঢাকায়। মাদক দ্রব্য ইয়াবা ক্রয় বিক্রয়ে স্ত্রী এবং শশুর বাড়ীর লোকজন সহযোগিতা করতেন।
বিপুল পরিমাণ ইয়াবা এবং মাদক বিক্রির টাকাসহ ২০১৯ সালে তুরাগ থানা পুলিশের অভিযানে আটক হলেও থেমে নেই রবিউল ইসলামের অপরাধ জগৎ।
তুরাগের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ইউনুস দাবি করেন, সাংবাদিক পরিচয়ে রবিউল ইসলাম নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছেন।
উত্তরখান- দক্ষিণখান, উত্তরা পূর্ব-পশ্চিম থানায় যেসকল নারী-পুরুষ বাসাবাড়িতে মেয়ে দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করেন তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা তুলে নিচ্ছেন বিডিআর।
ফার্নিচার ব্যবসায়ী জজ মিয়া জানান, পূর্বে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ ধর্ষণ মামলায় হাজতবাস রবিউল বর্তমানে সাংবাদিকতার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে কাঁপাচ্ছে উত্তরা।
অন্যদিকে উত্তরার সুপরিচিত ব্যবসায়ী সালমা দিয়েছেন চমকপ্রদ তথ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে রবিউল সর্বদা নারী নিয়ে চলাফেরা করেন। তিনি জানান, রবিউল ওরফে বিডিআর বর্তমানে যেসকল সিম/নম্বর ব্যবহার করেন তার কোনটাই নিজ নামে রেজিষ্ট্রেশন করা না। পরিবার বা অন্যকোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে রেজিষ্ট্রেশনকৃত সিম ব্যবহার করেন কথিত এই সাংবাদিক।
সেলিনা নামের অন্য এক নারী জানান, ১০ বছর যাবত বিডিআর ওরফে রাজু নানা ভাবে অত্যাচার করে আসছেন। তার কথার বাহিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। যখন যা বলে তাই করি; অথচ প্রতিমাসে কোন না কোন অজুহাতে আমার কাছ থেকে মাসিক চুক্তির বাহিরে টাকা দাবি করেন।
সেলিনা অভিযোগ করে জানান, গত ১০ মার্চ একটি অক্ষত পত্রিকায় আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন রবিউল ইসলাম রাজু। সেই সাথে প্রতিমাসের ৫ তারিখে অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকাসহ নতুন মাসোহারা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
ময়মনসিংহের মেয়ে তন্নির অভিযোগ আর গুরুতর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) ব্যবহার করে রবিউল সিন্ডিকেট নানা অপপ্রচার চালিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ছোট ভাইকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যসহ কলেজ পড়ুয়া ভাইয়ের পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন পরিবারটি।
দেশের স্থানীয় দৈনিক ‘আজকের পত্রিকা’র সাংবাদিক নুরুল আমিন হাসান তার মামলায় আসামী করেছেন রবিউল ইসলাম রাজু ওরফে বিডিআরকে।
গত শুক্রবার (১১ নভেম্বর ২০২২) রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দুই দফায় এ হামলা চালায় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের ফেরিওয়ালা হাসানের উপর। রবিউল ইসলাম রাজু ওরফে বিডিআর (৫২) সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন হাতে লাঠি সোঠা, রড, চাকু ইত্যাদি নিয়ে গতিরোধ করে এলোপাথাড়ি মারধর করে।
মামলার আর্জিত থেকে আরও জানা যায়, আসামী রবিউল আলম রাজু ওরফে বিডিআর রাজুর বিরুদ্ধে মাদক, অপরহণ, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
বরিশালের মুনা দাবি করেন, বিডিআর নিজে ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন যাবত অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছেন। এই কাজে রাজু’র তৃতীয় স্ত্রী পরিচয়ে এক নারী গেষ্ট ম্যানেজ করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফ্লাট থেকে নারীদের কালেকশন করে থাকেন।
স্বর্না নতুন কাগজের প্রতিবেদককে জানান, রাজু’র ব্যবহৃত নম্বরগুলোতে অধিকাংশ সময় আমরা বিকাশ লেনদেন করে থাকি। মাসের শুরুতেই সবার আগে বিডিআরকে টাকা দিতে হয়।
লাবনী দাবি করেন, রবিউল ইসলাম রাজুকে টাকা দিবে না ভুলেও এমন চিন্তা করা যাবেনা। বিডিআর ঠান্ডা তো উত্তরা ঠান্ডা।
সাদিয়া জানান, পুলিশ দিয়ে হয়রানি; নামসর্বস্ব পত্রিকায় প্রতিবেদন আর কিশোর গ্যাং দিয়ে হামলা কোনটাই বাদ রাখেনা রবিউল ইসলাম। তবে সময় মতো টাকা দিলে সব ঠিক।
তিনি যোগ করেন, পুলিশের দুষ্ট প্রকৃতির সদস্যদের টাকা আর নারীর লোভ দেখিয়ে বিডিআর তাদের দলে টানেন।
শিল্পীর সরল স্বীকারোক্তি, আমরা পেটের তাগিদে মানুষের মনোরঞ্জন করে থাকি কিন্তু বিডিআর কখনো সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স, মাঝে মধ্যে নিজেই পুলিশ পরিচয়ে অত্যাচার করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
ব্যবসা করেন আর নাই করেন উত্তরায় আপনাকে দেখলেই সর্বনাশ করে দিবে বিডিআর এমনটাই অভিযোগ সায়লার। সঙ্গে পুরুষ সে যেই হোক বিডিআরের চোখে তিনি খদ্দের।
নদীর অভিযোগ, বহু মামলার আসামি বিডিআর গ্রামে কোটি টাকার সম্পদ করেছেন আর আমরা এখনো ভাড়া বাসায় অপরাধ মূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এই ধরনের সামাজিক অপরাধ থেকে আমরা বেড়িয়ে আসতে চাইলেও রবিউলের জন্য সম্ভব না। যতদিন বিডিআর উত্তরায় থাকবে ততদিন এই ব্যবসা করে ওনাকে টাকা দিতে হবে।
উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিদের সকলেই কোন না কোন ভাবে অপরাধ মূলক কাজের সাথে জড়িত। তাঁরা নিজেরাই অকপটে তা স্বীকার করে নিয়েছেন। এবং তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুষ্ঠ তদন্তেই বের হয়ে আসবে রাজু’র ভয়ঙ্কর অধ্যায়। পরবর্তী প্রতিবেদনে আরও চমকপ্রদ এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে দ্বিতীয় প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে শীগ্রই।
