বিডিফিন্যানশিয়াল নিউজ ঘিরে কোটি টাকার কেলেঙ্কারি


অনুমোদনহীন ও ভূয়া অনলাইন পোর্টাল বিডিফিন্যানশিয়াল নিউজ-এর কথিত সম্পাদক ইউসুফ এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আইয়ুব হোসেন শাওনের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম, প্রতারণা ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ‘কুইক মিডিয়া’ নামে নিজেদের প্রস্তাবিত একটি ফার্মের মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দালালি ও অবৈধ সুবিধা আদায়ের অভিযোগে জড়িত বলে দাবি করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী এবং তাদের সাবেক অংশীদার।
সূত্র মতে, এ দু’জন সাংবাদিকতার আড়ালে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় অবৈধ প্রভাব বিস্তার করেন। সাবেক স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিনিময়ে অর্থ আদায়, ব্যাংক ঋণের নামে অনিয়ম এবং স্পন্সর বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগকারী সাবেক এক অংশীদার জানিয়েছেন, ইউসুফ ও শাওনের বিরুদ্ধে রয়েছে পর্যাপ্ত প্রমাণ, যেগুলোর ভিত্তিতে ইতোমধ্যে তদন্ত দাবি করা হয়েছে। ভুয়া সাংবাদিকতার আড়ালে তারা যে বিলাসবহুল জীবনযাপন গড়ে তুলেছেন। তাদের রয়েছে দামি গাড়ি, ফ্ল্যাট, এবং বিপুল অঙ্কের এফডিআর।
বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে, আইএফআইসি ব্যাংক-এর রিকভারি কার্যক্রমের নামে গ্রাহক হয়রানি এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন ছাড়াই তারা ব্যাংকের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেছেন। এসব কাজের মাধ্যমে তারা ব্যক্তিগতভাবে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন এবং সেই অর্থে গাড়ি-বাড়ি কেনাসহ এফডিআর গঠন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী তারা আইএফআইসি ব্যাংক-এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরোয়ারকে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা আদায় এবং চাকরি-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত ছিলেন। এসব অভিযোগের পেছনে দলিল ও প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে অনুসন্ধানী গণমাধ্যম করাপশান ইন মিডিয়া, যাদের কাছে ইউসুফ ও শাওনের সাবেক এক অংশীদার লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অননুমোদিত অনলাইন পোর্টাল, ভুয়া সাংবাদিকতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বাংলাদেশে গণমাধ্যম ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরনের প্রতারণা বন্ধে প্রয়োজন কঠোর আইন প্রয়োগ এবং সাংবাদিকদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করা।
সাংবাদিকতার পবিত্র পেশাকে ব্যবহার করে যেভাবে তারা অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন, তা শুধু গণমাধ্যম নয়, গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এমন দালালচক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও নাগরিক সমাজ।
এই বিষয়ে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অভিযোগের সত্যতা নিরূপণে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
