বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

কালুরঘাট সেতু দুর্ঘটনা: মানবিক ট্র্যাজেডির পেছনে প্রশাসনিক গাফিলতি

কালুরঘাট সেতু দুর্ঘটনা: মানবিক ট্র্যাজেডির পেছনে প্রশাসনিক গাফিলতি
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক কালুরঘাট সেতুতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ট্রেন দুর্ঘটনা গোটা জাতিকে শোকস্তব্ধ করেছে। একটি পর্যটক ট্রেনের অদূরদর্শিতা ও সংকেত অমান্যের কারণে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত তিনজন, যার মধ্যে রয়েছে মাত্র দুই বছর বয়সী এক শিশু। একটি জাতির জন্য এর চেয়ে মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক ব্যর্থতা আর কী হতে পারে?

প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, সেতুর ওপর একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে সৃষ্ট যানজটের মধ্যেই ট্রেন ঢুকে পড়ে। অথচ এমন পরিস্থিতিতে ট্রেন থামিয়ে যথাযথ সংকেতের অপেক্ষা করাই ছিল নিয়ম। কিন্তু ট্রেন চালক সেই নিয়ম উপেক্ষা করেন। এ ঘটনায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চারজন রেলকর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে এবং তদন্ত কমিটি গঠন করেছে—যা প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসনীয়, কিন্তু মোটেই যথেষ্ট নয়।

বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থাপনা বহু বছর ধরেই অব্যবস্থাপনা, দুর্বল যোগাযোগ, নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতার অভাব এবং প্রযুক্তির পরিণত ব্যবহার না থাকার কারণে সমালোচনার মুখে। কালুরঘাট সেতু দুর্ঘটনা যেন সেই দীর্ঘস্থায়ী সংকটেরই এক বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি।

সেতুটির অবস্থা অনেক দিন ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ। এটি একসঙ্গে রেল ও যানবাহনের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অস্বাভাবিক। এমন যৌথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তাবিধি ও সমন্বয় থাকাটা আবশ্যক—যার ঘাটতিই ঘটনার মূল উৎস হিসেবে সামনে এসেছে।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এ ধরনের দুর্ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও দেশে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটেছে রেল সিগন্যাল অমান্য, যন্ত্রপাতির ত্রুটি বা সংযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে। কিন্তু প্রতি ঘটনার পর কিছু বরখাস্ত, কিছু তদন্ত—এরপর ধামাচাপা দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হতে পারিনি।

তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ঠিকই, তবে সাধারণ মানুষ জানতে চায় এই তদন্ত আদৌ স্বচ্ছ হবে কি না? দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না? কালুরঘাট সেতুর মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় আধুনিকীকরণ হবে কি না?

শুধু তদন্ত নয়, প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থার প্রয়োগ এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রেল কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি। একই সঙ্গে একটি স্বাধীন রেল নিরাপত্তা কমিশন গঠনের কথা এখন গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা দরকার, যাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব নির্ধারণ ও তদারকি সম্ভব হয়।

পরিশেষে বলতেই হয়, প্রতিটি দুর্ঘটনা কেবল একটি সংখ্যা নয়, বরং কোনো না কোনো পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। ছোট্ট আয়েশা বা নিহত অন্য দুইজনের জীবন ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু এই ট্র্যাজেডিকে বদলের সূত্রপাত করতে পারে এমন উদ্যোগ নেওয়াই হবে তাদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ