ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক মানবতা


পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের কাছে শুধুই একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এক অনন্য আত্মত্যাগ, আনুগত্য ও মানবিকতার শিক্ষা। এই মহাপবিত্র দিনে আমরা স্মরণ করি হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগের ঘটনা, যেখানে মহান আল্লাহর নির্দেশে তিনি প্রিয় সন্তান ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। আল্লাহর প্রতি এই নিঃশর্ত আনুগত্য ও আত্মনিবেদনের দৃষ্টান্ত আজও বিশ্ব মুসলিমের জন্য প্রেরণার উৎস।
ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা হলো ত্যাগ। সমাজে এই চেতনা প্রতিষ্ঠা করা আজ অতীব প্রয়োজনীয়। যখন পার্থিব লোভ, বিভেদ ও স্বার্থপরতা সমাজে শেকড় গেড়ে বসেছে, তখন ঈদুল আজহার চেতনা হতে পারে পুনরুদ্ধারের এক আলো। কোরবানির পশু জবাইয়ের বাইরেও এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হলো—আত্মশুদ্ধি, ঈমানি দৃঢ়তা ও মানবতার প্রতি ভালোবাসা।
এই দিনে আমরা যেমন কোরবানি দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি, তেমনি কোরবানির মাংস আত্মীয়, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করে সামাজিক দায়িত্ব পালন করি। ধনী-গরিব বৈষম্য ঘুচিয়ে একটি সহমর্মিতার সমাজ গঠনে এ চর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এবারের ঈদেও দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লাখো মুসল্লির সমাবেশ প্রমাণ করে, জাতি আজও ধর্মীয় ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথে প্রত্যয়ী।
তবে উৎসবের আনন্দ যেন অরাজকতা, জনদুর্ভোগ বা পরিবেশ দূষণের কারণ না হয়—সেদিকে খেয়াল রাখা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনসমূহ কর্তৃক কোরবানির বর্জ্য অপসারণের দ্রুত কার্যক্রম ও প্রস্তুতিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। নাগরিকদেরও উচিত—পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা।
অবশেষে, আসুন আমরা ত্যাগের এই মহান শিক্ষাকে শুধু কোরবানির পশু জবাইয়ে সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের মন-মানসিকতা, জীবনচর্চা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত করি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে নিজেকে গড়ে তুলি—মানবতার কল্যাণে নিবেদিত হই।
এই মহামিলনের দিনে সবার জন্য রইল ঈদের শুভেচ্ছা—ঈদ মোবারক।
