এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে ছাত্রলীগ কোটা-নিয়োগ ও ষড়যন্ত্রের জাল


রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) বর্তমানে এক গভীর ও সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের আবর্তে জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানের অতীতের অস্বচ্ছ নিয়োগ ও রাজনৈতিক প্রভাবের পুঞ্জীভূত প্রভাব এখন প্রতিষ্ঠানটির সংস্কারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বৈরাচারী শাসনামলে বিশেষ করে সাবেক সরকারের সময় ইডিসিএলে হাজার হাজার নিয়োগ হয়েছিল তথাকথিত ‘ছাত্রলীগ কোটা’ ও দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে। মেধা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বকে উপেক্ষা করে যারা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদেরই অগ্রাধিকার ছিল। এতে প্রতিষ্ঠানটি এক সময়ে কার্যত রূপ নেয় একটি ‘দলীয় জনবল সরবরাহ কেন্দ্র’ এ।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে এক সুবিধাবাদী চক্র, যারা এখনো সক্রিয় এবং সুসংগঠিত। গোপালগঞ্জ কেন্দ্রিক রাজনীতির ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা এই গোষ্ঠী বর্তমানে ইডিসিএলের সংস্কার উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ব্যারিকেড তৈরি করেছে।
বর্তমানে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একজন সৎ, পেশাদার ও সংস্কারমুখী কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ মৃধা। তিনি পূর্বের সমস্ত অনিয়ম, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি স্বচ্ছ ও দক্ষ প্রতিষ্ঠান গঠনের লক্ষ্যে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।
তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানে অবৈধ নিয়োগ, ভূয়া সনদধারী কর্মচারী, অবৈধ পদোন্নতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। একাধিক ফাইল পুনরায় খোলা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিষ্ঠানে চালু হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক সংস্কৃতির চর্চা।
এই সংস্কার প্রচেষ্টাকেই এখন প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। সাবেক সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত সুবিধাভোগী একটি চক্র গুজব, মিথ্যা তথ্য এবং মিডিয়া অপপ্রচারের মাধ্যমে সামাদ মৃধার ভাবমূর্তি নষ্ট করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
এই চক্রের পেছনে রয়েছে সাবেক এমপি ও মন্ত্রীর মালিকানাধীন প্রভাবশালী কিছু মিডিয়া হাউজ, যারা নিজেদের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানকে পেছনে টেনে ধরছে। সামাদ মৃধার প্রতি বিদ্বেষ থেকে নয় বরং তাদের স্বার্থে আঘাত এসেছে বলেই তাকে অপসারণ ও হেয় করার এই অভিযান শুরু হয়েছে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু একজন সাহসী কর্মকর্তাকে থামানোর অপচেষ্টা নয় বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছ ও দলমুক্ত রাখার উদ্যোগকেই বানচাল করার চক্রান্ত। যদি এই ষড়যন্ত্র সফল হয়, তাহলে শুধুমাত্র একজন এমডি নয়, হারাবে গোটা স্বাস্থ্যখাত, আর প্রতারণার শিকার হবে সাধারণ জনগণ।
জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠান বারবার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতির কবলে পড়েছে। এখন যখন ইডিসিএল পুরনো প্রভাবমুক্ত হয়ে পেশাদার, দক্ষ এবং জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনায় রূপান্তরিত হচ্ছে, তখনই একদল চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারী প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।
এই প্রতিরোধ রুখে দিয়ে যদি ইডিসিএল-কে প্রকৃত অর্থে দক্ষ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা যায় তবে শুধু একটি কোম্পানি নয়, বরং লাভবান হবে বাংলাদেশের জনগণ ও স্বাস্থ্যখাত।
