ট্রফির পথে বাঁধা শুধু নেপাল, বাংলাদেশের সামনে চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ


গোলের বৃষ্টি, উত্তেজনা আর অনুপ্রেরণাদায়ী পারফরম্যান্সে জমজমাট হয়ে উঠেছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দাপুটে ফুটবল খেলছে বাংলাদেশ। ভারত না থাকায় প্রতিযোগিতায় শুরুর আগেই অনেকটা এগিয়ে ছিল লাল-সবুজের মেয়েরা। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতেই মাঠে নামছে আফঈদা খন্দকারের দল।
সম্প্রতি এশিয়া কাপে ইতিহাস গড়া জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিয়ে গড়া দলটি দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ ও অভিজ্ঞ। এই স্কোয়াডের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ খেলেছে টানা পাঁচ ম্যাচ, যার প্রতিটিতেই এসেছে জয়। প্রতিপক্ষকে একের পর এক হারিয়ে ফাইনালের পথ একরকম নিশ্চিত করে ফেলেছে স্বাগতিকরা।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার কাদা ও পানিভেজা মাঠও থামাতে পারেনি মেয়েদের ছন্দ। গতিময় ফুটবল, সুশৃঙ্খল রক্ষণ ও কার্যকর আক্রমণে প্রতিটি ম্যাচেই আধিপত্য দেখিয়েছে তারা।
এখন শুধু এক ধাপ বাকি—চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ট্রফি তুলে ধরে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আবারও প্রমাণ করা।
চার দলের সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে এবার কোনো ফাইনাল নেই। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে প্রতিটি দল মুখোমুখি হচ্ছে দুইবার করে। ফলে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই নির্ধারিত হবে চ্যাম্পিয়ন। সে হিসেবেই আজকের বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচটি হয়ে উঠেছে ‘অঘোষিত ফাইনাল’।
পাঁচ ম্যাচে টানা জয় নিয়ে ১৫ পয়েন্টে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ কম খেলে ১২ পয়েন্টে দুই নম্বরে নেপাল। আগের দেখায় নেপালকে ৩-২ গোলে হারানোয় আজ ড্র করলেই শিরোপা উঠবে আফঈদা খন্দকারদের হাতে। তবে হেরে গেলে সমান পয়েন্টে গিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকা দল পাবে ট্রফি—যেখানে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে নেপাল।
নেপাল এরই মধ্যে ৩০ গোল করেছে ও মাত্র ৪টি হজম করেছে, তাদের গোল পার্থক্য +২৬। বিপরীতে বাংলাদেশের গোল সংখ্যা ২৪, খেয়েছে ৪টি, গোল পার্থক্য +২০। সোজা কথায়, আজ যদি বাংলাদেশ হারে, তাহলে পয়েন্ট সমান হলেও গোল গড়ে পিছিয়ে ট্রফি হাতছাড়া হবে।
টুর্নামেন্টের শুরুতে শ্রীলঙ্কাকে ৯-১ ব্যবধানে হারিয়ে গোল উৎসব করেছিল বাংলাদেশ। অথচ ফিরতি লেগে জয় এসেছে ৫-০ ব্যবধানে। এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে—মেয়েদের খেলায় কি ধার কমে এসেছে? কোচ পিটার বাটলার অবশ্য বিষয়টিকে দেখছেন ভিন্নভাবে। তাঁর মতে, দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স যাচাই করতেই বিভিন্ন ম্যাচে একাদশে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে পাঁচটি পরিবর্তন আনেন কোচ। বেঞ্চে থাকা খেলোয়াড়দের খেলিয়ে ম্যাচ পরিস্থিতিতে যাচাই করেন। বাটলারের মতে, আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এই কৌশল।
তবে জয়ের পরও শিষ্যদের খেলার ধরনে সন্তুষ্ট নন এই ইংলিশ কোচ। খেলোয়াড়রা অনেক সময় দলগত ফুটবলের বদলে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখাতে চায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। যদিও দ্রুতই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার আশা জানিয়েছেন।
আজকের ম্যাচকে সামনে রেখে ড্রেসিংরুমে ফুটবলারদের মনোভাব নিয়ে সতর্ক পিটার বাটলার। তাঁর ভাষায় "শিরোপা জেতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে আমি এখানে এসেছি নারী ফুটবলারদের উন্নতি ঘটাতে, এএফসি টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুত করতে।"
তিনি আরও বলেন,
"নেপাল খুবই ভালো দল, আমাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে। ওদের কয়েকজন ফুটবলার দারুণ ছন্দে আছে। আমরা যদি ভাবি খুব সহজে ওদের হারিয়ে দেব, তাহলে সেটা হবে বড় ভুল। আশা করি, মেয়েরা সেটা ভাবছে না।"
এদিকে সাগরিকার পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পাওয়া তৃষ্ণা রানীর পারফরম্যান্সে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কোচ।
সন্ধ্যা ৭টায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে শুরু হবে ম্যাচ। সমীকরণ স্পষ্ট—ড্র করলেই শিরোপা বাংলাদেশে থাকছে, কিন্তু হারলেই ট্রফি চলে যাবে নেপালে।
শুধু ফুটবল দক্ষতা নয়, আজকের ম্যাচে দরকার হবে ধৈর্য, দৃঢ়তা ও কৌশলী মনোভাব। আফঈদাদের সামনে ট্রফি রক্ষার মিশন—তীরে এসে তরী না ডুবলেই হয়।
