ঋতুপর্ণারা ছুঁতে পারেন বিশ্বকাপের স্বপ্নও


বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল গড়েছে নতুন ইতিহাস। বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে লাল-সবুজের মেয়েরা।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) শক্তিশালী স্বাগতিক মিয়ানমারকে ২-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক ঋতুপর্ণা চাকমা। এই জয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো জয় তুলে নিয়ে ২০২৬ এশিয়ান কাপের দরজা প্রায় খুলে ফেলে বাংলাদেশ।
পরবর্তীতে একই গ্রুপের আরেক ম্যাচে বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যকার ড্রয়ের ফলে, এক ম্যাচ হাতে রেখেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করে সাবিনা-কৃষ্ণারা।
উল্লেখ্য, ২০২৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বটি আগামী নারী বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব হিসেবেও বিবেচিত হবে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
নারী এশিয়ান কাপে জায়গা করে নিয়ে ফুটবল ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছে বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালে টুর্নামেন্ট শুরুর পর প্রথম ২০ আসরে অংশ নিয়েছিল ২২টি দেশ। এবার ২৩তম দল হিসেবে সেই তালিকায় যোগ হলো লাল-সবুজের নারীদের নাম।
২০২৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এই আসরের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে এখন পর্যন্ত ৫টি দল—স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, ২০২২ আসরের শীর্ষ তিন দল চীন (চ্যাম্পিয়ন), দক্ষিণ কোরিয়া (রানার্সআপ) ও জাপান (তৃতীয়), এবং বাছাইপর্বের ‘সি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।
ঋতুপর্ণার জোড়া গোলে নিশ্চিত হলো ইতিহাস
গতকাল স্বাগতিক মিয়ানমারকে ২-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ নারী দল। উভয় গোল করেন ঋতুপর্ণা চাকমা। এতে করে টানা দ্বিতীয় জয়ে এশিয়ান কাপের পথে এক পা বাড়ায় বাংলাদেশ। এরপর গ্রুপের অন্য ম্যাচে বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তান ড্র করলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা নিশ্চিত হয়।
২০২৬ এশিয়ান কাপ: আয়োজক, ভেন্যু ও সময়সূচি
এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের ১ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত। খেলা হবে অস্ট্রেলিয়ার তিনটি শহরের পাঁচটি ভেন্যুতে—
সিডনি: স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্টার্ন সিডনি স্টেডিয়াম
গোল্ড কোস্ট: গোল্ড কোস্ট স্টেডিয়াম
পার্থ: রেকট্যাঙ্গুলার স্টেডিয়াম ও পার্থ স্টেডিয়াম
ড্র ও ফরম্যাট: কীভাবে চলবে টুর্নামেন্ট
১২টি দল তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে।
গ্রুপ ‘এ’-তে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া আগে থেকেই নিশ্চিত।
বাকি ১১টি দলকে চারটি পটে ভাগ করা হবে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে।
প্রতিটি পটে থাকবে তিনটি করে দল।
সর্বশেষ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২৮তম হওয়ায় বাংলাদেশ থাকবে চতুর্থ পটে।
গ্রুপ পর্ব শেষে:
প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল (চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ)
ও তিন গ্রুপের মধ্যে সেরা দুই তৃতীয় স্থানধারী যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে।
এরপর সেমিফাইনাল ও ফাইনালের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হবে চ্যাম্পিয়ন।
ড্র অনুষ্ঠিত হবে:
২৯ জুলাই, সিডনির টাউন হলে।
বিশ্বকাপের পথ: কী করতে হবে বাংলাদেশকে?
এই টুর্নামেন্টই হবে ২০২৭ নারী বিশ্বকাপের এশিয়ান বাছাইপর্ব।
এশিয়া থেকে সরাসরি বিশ্বকাপে যাবে সেমিফাইনালে উঠা চারটি দল।
কোয়ার্টার ফাইনালে হারা চার দলের মধ্যে দুটি প্লে-ইন ম্যাচ হবে।
জয়ী দুই দল সরাসরি বিশ্বকাপে।
পরাজিত দুই দল খেলবে আন্ত-মহাদেশীয় প্লে-অফে।
২০২৭ নারী বিশ্বকাপ হবে ব্রাজিলে।
অলিম্পিকের বাছাইও এখান থেকেই
২০২৬ নারী এশিয়ান কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠা আটটি দল সুযোগ পাবে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের বাছাইপর্ব খেলার।
বাছাইপর্বে দলগুলো দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে।
প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল সরাসরি অলিম্পিকে অংশ নিতে পারবে।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের জন্য এটি শুধু একটি টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ নয়—বরং বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকের মঞ্চে পৌঁছানোর বাস্তব সম্ভাবনা।
